দুদককে দুর্নীতি দমনে আন্তরিক ও কৌশলী হতে হবে : রাষ্ট্রপতি

দুদককে দুর্নীতি দমনে আন্তরিক ও কৌশলী হয়ে কাজের মাধ্যমে সমালোচনার জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসের আলোচনা সভার প্রধান অতিথি হিসেবে এমন নির্দেশনা দেন।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্নীতিবাজের পরিচয় কেবলই দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজদের আর কোনো পরিচয় নেই। ভুল পদক্ষেপে যেন কারও ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সামাজিকভাবে দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরি করতে কাজ করতে হবে। নৈতিকতা প্রদর্শন করে দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো মানবিক, বৈষম্যহীন, দারিদ্রমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ। আমাদের পবিত্র সংবিধানও দুর্নীতিকে নিষিদ্ধ করেছে। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না …”। সংবিধানের এ মর্মকে ধারণ করেই দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন।

সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্নীতি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের সব থেকে বড় বাধা। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথ বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে গেছেন নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আবারো সেই পথ ধরে এগিয়ে চলছে দেশ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বেড়েছে মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ুষ্কাল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাস্তবায়িত হয়েছে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী বহুমুখী টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প।

আরো পড়ুন  সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

অনুষ্ঠানের এর আগে দুদকের চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, দুর্নীতিবাজকে সাহায্য করা, স্বজনপ্রীতিও দুর্নীতি। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হলেও দুর্নীতি বেড়েছে। এতে প্রমাণ হয় অভাবে দুর্নীতি করে, লোভের কারণে দুর্নীতি হচ্ছে। দুদক পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। দুর্নীতি কেবল সেবার বিনিময় ঘুষ নেওয়াই দুর্নীতি নয়, দায়িত্ব পালন না করাও দুর্নীতি।

অন্যদিকে দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক বলেন, দেশ থেকে নানা উপায়ে অর্থ পাচার হচ্ছে। শিক্ষিত ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী দেশের টাকা পাচার করছে। ওভার ইনভয়েচিং আন্ডারভয়েচিং করে অর্থ পাচার হচ্ছে।

দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) আছিয়া খাতুন বলেন, সামাজিকভাবে দুর্নীতি বিষয় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা না গেলে, কেবল দুদকের পক্ষে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ঘুষ দুর্নীতি নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করব। দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্জন ম্লান না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দুর্নীতিকে না বলি।

এর আগে সকালে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদ্বোধন করেন। জাতিসংঘ ২০০৩ সালে এই দিনকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ঘোষণা করে। সে হিসেবে এবার ২১তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ ’।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন করা হবে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। একই সঙ্গে দেশে সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং পিকেএসএফসহ অন্যান্য এনজিওতে দুর্নীতি বিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *