হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলা ও আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবার শেষ আশ্রয়স্থল। এখানে পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষও সেবা নিয়ে থাকেন। তবে প্রয়োজনীয় জনবল-যন্ত্রপাতি ছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসক সংকটও চলছে। এতে হাওর এলাকার কয়েক লাখ প্রান্তিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
জানা যায়, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ চিকিৎসকের বিপরীতে আছেন ১১ জন। এর মধ্যে প্রসূতি সেবায় অতি গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি (সার্জন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যানেস্থেসিয়া, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডেন্টিস্ট নেই। এ ছাড়া ল্যাবের গুরুত্বপূর্ণ মেশিন-সরঞ্জামেরও ঘাটতি রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আলট্রাসনোগ্রাফি, রেডিওগ্রাফি, এক্সরে মেশিনসহ অপারেশন থিয়েটারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মেশিন অপারেটর নেই। এতে রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই গর্ভবতী নারীসহ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন থাকা রোগীদের দূরের জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল অথবা প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। এতে যেমন বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে, তেমনি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। এ ছাড়া হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী না থাকায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চারজনকে নিয়োগ দিয়ে আপাতত চলছে এই কাজ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কয়েকজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রসূতি বা গর্ভবতী নারীর কোনো জটিলতা দেখা দিলেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন। এ ছাড়া আঘাতজনিত সমস্যা নিয়ে কোনো রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে এক্সরে মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় সেসব রোগীকেও রেফার্ড করে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। উপজেলা থেকে জেলা সদরের অবস্থান দূরে হওয়ায় রোগীদের বিপাকে পড়তে হয়।
জুয়েল রানা নামে এক ভুক্তভোগীর ভাষ্য, আঘাতের কারণে তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন। কিন্তু রেডিওগ্রাফির ব্যবস্থা না থাকায় তাঁকে বাধ্য হয়ে জেলা শহরে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, যদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকত, তাহলে এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
সাফিয়া আক্তার নামে এক নারী বলেন, মেয়েদের গর্ভকালীন অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় উপজেলার নারীরা সেই সেবা পাচ্ছেন না। শিগগিরই
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ গাইনি চিকিৎসক ও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
সুরেন্দ্র দাস নামে একজন জানান, তাঁর স্ত্রীর বাচ্চা প্রসবের তারিখ নিকটবর্তী হওয়াতে তাঁকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন
হয়। এসব পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় পৌর
শহরের একটি ক্লিনিকে পরীক্ষা ও সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হয়। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি অনেক টাকা খরচ হয়।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসকসহ বেশ কিছু পদশূন্য রয়েছে। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সংকট রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এগুলো অনুমোদন হয়ে এলে সংকট কেটে যাবে।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, শুধু আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নয়, জেলার আরও কয়েকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। এসব বিষয় লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এসব সংকট কেটে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।