প্রেমের টানে সাভারে এসে ঘর বাঁধলেন সাইপ্রাসের তরুণী

সাভারের যুবক শামীম ২০১৫ সালে সাইপ্রাসে পাড়ি জমান। সেখানে সিডিএ কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি নেন শামীম। চাকরির সুবাদে পরিচয় হয় সাইপ্রাসের নাগরিক আন্থি তেলেবান্থুর সঙ্গে। এরপর লম্বা সময় চুটিয়ে প্রেম চলে তাদের। কিন্তু সেখানে বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে বাগড়া দেয় সে দেশের প্রচলিত আইন। অবশেষে বিয়ের জন্য দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন ওই নারী, করেছেন ধর্মত্যাগও।

শুক্রবার (১ডিসেম্বর) রাতে আশুলিয়ার গাজীরচটের আয়নাল মার্কেট এলাকায় শামীম আহমেদের বাড়িতে গেলে এভাবেই ঢাকা পোস্টকে তাদের গল্প শোনান এই নবদম্পতি।

এর আগে গত ২৭ নভেম্বর সাইপ্রাস থেকে বাংলাদেশে আসেন আন্থি। পরে ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন তারা।

শামীমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীসহ নানা মানুষের ভীড়। মূলত বিদেশি আন্থিকে দেখতে এসেছে প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশীদের সঙ্গে গান আর আড্ডায় মেতে উঠতে দেখা গেছে ওই তরুণীকে। তার মুখে শোনাচ্ছেন ‘সাদা সাদা, কালা কালা’ গানটি। বাড়ির মানুষসহ উপভোগও করছেন সবাই। এক কথায় অল্প সময়ের মধ্যেই শ্বশুড়বাড়ি, আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীদের মন জয় করে নিয়েছেন আন্থি।

শামীম আহমেদ বলেন, লেখাপড়া শেষ করে এবছরই দেশে ফিরেছি। সাইপ্রাসে যখন ছিলাম তখন পার্টটাইম চাকরির সুবাদে পরিচয় হয় আন্থির সঙ্গে। পরে ২০২১ সালে আন্থির সাথে বাগদান হলেও সেদেশের আইনি জটিলতায় বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। সব শেষে আন্থি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আমাদের দেশে এলে আমরা আইন মেনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমরা উভয়ের পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে সম্পন্ন করেছি।

আরো পড়ুন  সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ৪

আন্থি বলেন, আমরা দুইজন একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। সেখানেই আমাদের পরিচয়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ভালো চরিত্রের অধিকারী হওয়ায় আমি তার প্রেমে পড়েছি। আমাদের সম্পর্ক উভয়ের পরিবার মেনে নিয়েছে। আমি বাংলাদেশের আথিতেয়তা আর সংস্কৃতির প্রেমে পড়েছি। আমার অনেক ভালো লেগেছে।

শামিমের মা হালিমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে এ বছরই দেশে এসেছে। আমরা ওদের সম্পর্কের কথা আগে থেকেই জানতাম। আমাদের সঙ্গে বউমা ভিডিও কলে কথা বলেছে। তাদের বিয়েতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বরং আমাদের পুরো পরিবার অনেক খুশি হয়েছে।

শামীর চাচা ফরিদ বলেন, শামীম বিদেশী মেয়েকে বিয়ে করলেও বাঙ্গালীর মতোই আমাদের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে। তার চলাফেরা দেখে মনে হচ্ছে বাঙ্গালী সংস্কৃতি সম্পর্কে আগে থেকেই অনেক কিছু জানেন। এই ধরেন শাড়ি পড়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের সামনে ঘোমটা পরে যাচ্ছে। বাঙ্গালী খাবার বিনা দ্বিধায় খাচ্ছে। আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আন্থিরও এখন পর্যন্ত কোনো কিছুতে বিরক্তি চোখে পড়েনি কিংবা প্রকাশ করেনি।

আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বর মো. মইনুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, সাইপ্রাসের এক নারী আমাদের এলাকায় এসেছেন। তারা উভয় পরিবারের সম্মতিতে বাংলাদেশী আইন অনুযায়ী কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করেছেন। সাইপ্রাসে গাজিরচটের শামীম থাকতো। সেখানে তাদের পরিচয়ের পর প্রেম হয়। পরে দেশে এসে আন্থি নামের ওই নারী মুসলিম হয়ে শামীমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *