এক-দুদিন আগেও সিলেটে পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে এক রাতের ব্যবধানে মশলা পণ্যটির কেজি ২০০ ছুঁয়ে যায়।
অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুদকৃত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন আকস্মিকভাবে।
এ অবস্থায় পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু হলেও দমে নেই অসাধু ব্যবসায়ীরা। অভিযানিক দল গেলে দাম কমিয়ে বলেন। আর অভিযানিক দলের প্রস্থানের পর চড়া দামে বিক্রি করা হয় পেঁয়াজ। এ যেন অভিযানিক দল ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা চলে।
তবে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিভিন্ন স্থানে অভিযানের খবরে কেজিতে ১০০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা কমানো হয়েছে কোথাও কোথাও।
নগরের মিরের ময়দান ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে এক কেজি পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় কিনেছেন ওই এলাকার বাসিন্দা মৃদুল আহমদ। পেঁয়াজের দাম বাড়তি রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই দোকানি বলেন, আমদানি বন্ধ, তাই।
এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতারা বলেন, আমদানি বন্ধ জানতে পেরে এক রাতে পেঁয়াজের কেজি ১০০-১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০-২০০ টাকা দাম বিক্রি করা হচ্ছে। এ যেন মগের মুল্লুক। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ন্যূনতম সততা নেই।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২০০ টাকা থেকে ২০ টাকা কমিয়ে ১৮০ টাকা দামে বিভিন্ন খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজের কেজি। অথচ দোকানে মজুদকৃত এসব পেঁয়াজ আড়ত থেকে প্রকারভেদে ব্যবসায়ীরা ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। আর আমদানি বন্ধ জেনেই দাম বাড়িয়ে করেছেন দুইশ’র বেশি। বিশেষ করে পাইকারি বাজারে হুট করে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। এরপর অভিযানে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কয়েক ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে আনতে জরুরি বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পুলিশ প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষরণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
বৈঠকে বিকেলের মধ্যে সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসনকে অবগত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া অতিরিক্ত দামে সিলেট পেয়াঁজ বিক্রি না করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। কেউ আইন অমান্য করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে সিলেটের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু সালেহ মো. হুমায়ূন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতে সিলেটের ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারাও এ বিষয়ে আশ্বাস দেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিকেলের মধ্যে ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে যৌক্তিক বিক্রয়মূল্য আমাদের জানানোর কথা রয়েছে। পরে জেলা প্রশাসক যাচাই করে দাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা করবেন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, সিলেটের পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে তদারকি অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক দামে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, আমদানিকৃত পেঁয়াজের মূল্য বৈঠকে নির্ধারিত না হলেও দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকার বেশি বিক্রি না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।