সুনামগঞ্জে বাঁধে ভাঙন, ধসে পড়লো নদীতে

সুনামগঞ্জের অন্যতম বৃহৎ করচার হাওরের হরিমণের বাঁধ ও বেকা বাঁধের বড় একটি অংশ নদীতে ধসে গেছে। এ কারণে করচার হাওরপাড়ের অর্ধলক্ষাধিক কৃষকের মধ্যে উদ্বেগ—উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা রবিবার বিকেলে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে বাঁধ পূর্ব দিকে সরিয়ে দ্রুত নতুন স্থান দিয়ে করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা মিলিয়ে করচার হাওরে জমির পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার হেক্টর। বিশাল এই হাওরপাড়ে গ্রাম আছে দুই উপজেলা মিলিয়ে ৫০টিরও বেশি। এসব গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের প্রধান জীবিকা বোর চাষাবাসের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। হাওরের পশ্চিমাংশে খরস্রোতা ঘটঘটিয়া নদী। মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল এই নদী দিয়ে ভাটিতে নামে। নদীর পাড়ের হরিমণের বাঁধ ও বেকা বাঁধ হাওরবাসীর জন্য প্রতিবছরই উদ্বেগ—উৎকণ্ঠার কারণ হয়। ২০১৭ সালে এই বাঁধের বিশাল অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ায় করচার হাওর ডুবে যায়। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালেও বাঁধ ভাঙার উপক্রম হয়। হাওরপাড়ের কৃষকদের প্রাণপণ চেষ্টায় রক্ষা পায় বাঁধটি। একইভাবে বেকা বাঁধও ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। এবার দুই বাঁধেরই আধাআধি কাজ হতে না হতেই দুই অংশে ধস শুরু হয়েছে।

হাওরপাড়ের রাধানগরের কৃষক কামাল উদ্দিন বললেন, বাঁধটি ধসে যাওয়ায় পুরো হাওরপাড়ে দুশ্চিন্তার ভর করেছে। দ্রুত বাঁধ সরিয়ে মজবুতভাবে না করলে লাখো কৃষকের কপাল ভাঙবে।

বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক জসিম উদ্দিন বললেন, বাঁধ কেবল পূর্ব দিকে সরালেই হবে না। নদীর পাড় ভাঙনও ঠেকাতে হবে। না হয় বাঁধ ভাঙার আশক্সক্ষা থেকেই যাবে। গাছের বরলি দিয়ে ফাইলিং করে ভাঙন ঠেকিয়ে বাঁধের কাজ করতে হবে। নতুন বাঁধের মাটি কমপেকসন করতে হবে ভালোভাবে।

আরো পড়ুন  বজ্রপাতে পুড়ল ৯টি দোকান ও ৪টি সিএনজি রিকশা

বিশ্বম্ভরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ বললেন, মূল বাঁধের অর্ধেক অংশ নদীতে ধসে গেছে। এখন বাঁধ পূর্ব দিকে সরিয়ে যেভাবে মাটি দেওয়া হচ্ছে, সেভাবে মাটি টিকবে না। কমপেকসন কম হচ্ছে। বাঁধ দুর্বল হয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। নদীর পাড় ভাঙন ঠেকিয়ে যতটা সম্ভব সোজা করে করতে হবে বাঁধ। দ্রুত কাজ শেষ করে জিও ব্যাগ লাগাতে হবে দুইটি ভাঙনেই।

জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জেলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ রবিবার নদীতে ধসে যাওয়া অংশ পরিদর্শন করেছেন। কী কারণে বাঁধ নদীতে ধসে গেল প্রতিবেদন দেবার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে দ্রুত মজবুত করে অন্য দিক দিয়ে বাঁধের কাজ শেষ করারও নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বললেন, বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কাজও দ্রুত নতুনভাবে করা হবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বললেন, বিষয়টিকে আমরাও গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। কৃষকগণ উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। আমরা বাঁধটির দিক পরিবর্তন করে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। মাটির কাজ করার সময় ভালোভাবে কমপেকসন করা হবে। কমপেকসনে কোন ত্রুটি মেনে নেওয়া হবে না। বাঁশ—চট, জিও বেগ দিয়ে বাঁধ টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, এই বাঁধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সাদিক স্যারও ফোন দিয়েছেন। আমি রবিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি। দিক পরিবর্তন করে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *