সিলেটে উচ্ছেদেও ঠায় দাঁড়িয়ে কাউন্সিলরের ভবন

দেড় বছর আগে সিলেট নগরের পাঠানটুলা ও মদিনা মার্কেট এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অন্তত ১০০ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বেশ কিছু বহুতল ভবনও ছিল। তবে মদিনা মার্কেট এলাকায় তিনতলা ভবনের অবৈধ অংশটি ভাঙা হয়নি। এখনো তা অক্ষত আছে। ভবনটির মালিক স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, প্যানেল মেয়র-১ এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মখলিছুর রহমানের (কামরান)।

ভবনটি একটি বিপণিবিতান, নাম রাহাত কমপ্লেক্স। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বাঁ পাশে মদিনা মার্কেট এলাকায় এর অবস্থান। পাশেই পাঠানটুলা এলাকা। এই দুই এলাকা সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। দুই এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অন্তত ১০০ স্থাপনা ২০২২ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে উচ্ছেদ করেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদকালে একটি চারতলা ও দুটি পাঁচতলা ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে অক্ষত অবস্থায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কাউন্সিলর মখলিছুরের তিনতলা বিপণিবিতানটি।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা। এই জায়গায় অনেকে অবৈধভাবে বহুতল ভবন ও স্থাপনা তৈরি করে দখলে রেখেছিলেন। সওজ তাঁদের স্থাপনা সরাতে বারবার নোটিশ দেয়। তবে সফল হয়নি। পরে সওজের অনুরোধে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব স্থাপনা উচ্ছেদে ২০২২ সালের ৩০ জুলাই থেকে টানা কয়েক দিন অভিযান চালায়। তখন আশপাশের সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও স্থানীয় কাউন্সিলর মখলিছুরের ভবনে বুলডোজার পড়েনি।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলর মখলিছুরের রাহাত কমপ্লেক্স ভবনটির ৮ থেকে ১০ ফুট অংশ সওজের জায়গার মধ্যে পড়েছে। তবে মখলিছুর রহমানের দাবি, তাঁর বিপণিবিতানের ভেতরে সওজের কোনো জায়গা নেই। বছর দুই আগে তিনি বিপণিবিতানের জায়গাটি কেনেন। তাঁর নামে নামজারি, পরচা, দলিলসহ সব কাগজ আছে। সওজ ১৯৭৮ সালে জায়গাটি অধিগ্রহণ করার কথা বললেও এর সপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বলে তাঁর দাবি।

আরো পড়ুন  পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে ভেতরে ঢুকতে দেন না দালালরা

আশপাশের সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও ভবনটি কীভাবে থেকে গেল, জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সওজের জায়গার মধ্যে থাকা অবৈধ প্রায় সব স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযান শুরুর পর অনেকে মামলা করেন, তদবিরও ছিল। এতে আর উচ্ছেদ কার্যক্রম এগোয়নি। তাই শতভাগ সুষ্ঠুভাবে কাজ করা যায়নি। কাউন্সিলরের বিপণিবিতানের ভেতরে পড়া অংশ কেন উচ্ছেদ হয়নি, তার খোঁজ নেওয়া হবে।

স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান উচ্ছেদের হাত থেকে তাঁর ভবনটি রক্ষা করেছেন। স্থানীয় তিনজন বাসিন্দার ভাষ্য, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় কখনো কখনো কাউন্সিলর নিজে উপস্থিত থাকতেন। যে কারণে অবৈধভাবে তৈরি একটি চারতলা ও দুটি পাঁচতলা ভবন, আশপাশের টংদোকান, বাসা, বাণিজ্যিক ভবনের ফটকসহ অন্তত ১০০ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও তাঁর ভবনের কিছু হয়নি।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান বলেন, পাঠানটুলা এলাকায় সওজের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা ছিল। তবে মদিনা মার্কেট এলাকায় এমন কোনো স্থাপনা নেই। যে কারণে মদিনা মার্কেট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো যায়নি। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর পাঁচ থেকে সাতটি মামলা করেন জায়গার মালিকেরা। তখন অভিযান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাঁর নিজস্ব জায়গা হওয়ার পরও কাউন্সিলর হিসেবে তিনি জনস্বার্থে তাঁর ভবনের ভেতর দিয়ে ড্রেন যেতে দিয়েছেন।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা বলছে, পাঠানটুলা ও মদিনা মার্কেট এলাকায় ড্রেন ও রাস্তা প্রশস্ত করে জলাবদ্ধতা ও যানজট দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে উচ্ছেদে দখলমুক্ত জায়গায় নির্মাণকাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সুপ্রশস্ত ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। কাউন্সিলরের স্থাপনা যথাস্থানে রেখে নিচ দিয়ে ড্রেন নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন  মাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যু

জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *