বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য নাম উল্লেখ না করে পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে থাকা সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) নওয়াজ শরিফ।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে পাকিস্তানে। মঙ্গলবার দেশটির সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে পিএমএলএনের প্রার্থীদের সঙ্গে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানে নওয়াজ বলেন, ‘বর্তমানে (অর্থনৈতিকভাবে) পাকিস্তান যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেজন্য ভারত, যুক্তরাষ্ট্র বা আফগানিস্তান— কেউই দায়ী নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে গুলি করেছি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের কারচুপির মাধ্যমে তারা (সামরিক বাহিনী) এমন এক সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, যে সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস ও জনগণকে ভোগান্তি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সাল থেকে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুত প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ সহায়তা না দিলে এতদিনে মুখ থুবড়ে পড়ত দেশটি।
নিজ বক্তব্যে ৭৩ বছর বয়সী এই ঝানু রাজনৈতিক নেতা আরও বলেন, ১৯৯৩, ১৯৯৯ এবং ২০১৭— তিন মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সামরিক বাহিনীর কারণে কোনো বারই মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
দশকের পর দশক ধরে সামরিক স্বৈরতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের বিচারবিভাগের কঠোর সমালোচনা করেছেন নওয়াজ। ২০১৭ সালে তাকে উৎখাত করার জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান ফাইজ আহমেদকেও দোষারোপ করেছেন তিনি।
নওয়াজ বলেন, ‘যখন তারা (সামরিক বাহিনী) সংবিধান লঙ্ঘন করে, তখন বিচারকরা তাদের গলায় মালা পরানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু একই কাজ যদি কোনো রাজনীতিবিদ করেন, তাহলে অতিমাত্রায় কঠোরতা প্রদর্শন করেন। এমনকি অনেক সময় পার্লামেন্ট বিলোপের রায়ও তারা দিয়েছেন…কেন?’
ফাইজ আহমেদকে ইঙ্গিত করে নওয়াজ বলেন, ‘যারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আমাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করেছিলেন, আজ তাদের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে।’
উল্লেখ্য, আল-আজিজিয়া ইস্পাত কারখানা দুর্নীতি মামলা এবং এভেনফিল্ড দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০১৯ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল নওয়াজ শরিফকে। তাকে পিএমএলএনের দলীয় পদ থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও আজীবন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। পরে ওই বছরই মেডিকেল ভিসায় যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি।
লন্ডন এবং দুবাইয়ে প্রায় চার বছরের নির্বাসিত জীবনযাপনের পর গত নভেম্বরে পাকিস্তানে ফিরে আসেন নওয়াজ। সম্প্রতি আল-আজিজিয়া ইস্পাত কারখানা এবং এভেনফিল্ড দুর্নীতি মামলা থেকেও তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।