আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে ৭টি আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোটের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে আসন বণ্টন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, আমরা বিনয়ের সঙ্গে আসন পুনর্বিবেচনার দাবি করেছি। আমরা বলেছি, যে ৭টি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে সেটা আর একটু বাড়ানো দরকার এবং জোটের প্রার্থীর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহার করা দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা আমির হোসেন আমুর প্রস্তাবকে প্রাথমিক প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছি।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শরিকদের জন্য আর আসন বাড়ানো এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি জানতে চাইলে জাসদ সভাপতি বলেন, দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের কথা বলেছেন। প্রস্তাবটির পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে আমরা আমাদের কথা বলেছি।
যদি সমঝোতা না হয় তাহলে কি করবেন জানতে চাইলে ইনু বলেন, পুনর্বিবেচনার কি ফলাফল হয় দেখা যাক। তারপর আমরা উত্তর দেব।
এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের আলাপ আলোচনা চলছে এবং একটা সমঝোতার দারপ্রান্তে এসে আমরা পৌঁছেছি। মর্যাদার সঙ্গে আমরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। এটা নিয়ে কোনো ধরনের কথা এখনও আমাদের সঙ্গে হয়নি। বিনয়ের সঙ্গে যে কথাটি উত্থাপিত হয়েছে এটাতো আলোচনা করার বিষয় থাকতেই পারে। সময় এখনও আছে, তবে আমি মনে করি আমাদের দলের পক্ষ থেকে এটা মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে আলোচনা আমাদের আগামী দিনেও চলবে।
হাসানুল হক ইনু আসন বণ্টন পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়েছেন জানতে চাইল আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এখানে সুনির্দিষ্ট বিষয় এবং সিট নিয়ে ১৪ দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয় না। আলোচনাগুলো হয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিজয়ের লক্ষ্যে। কোনো প্রার্থী নির্বাচনে বিজয় অর্জন করবে এ সম্ভাব্যটাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সে বিবেচনায় নানা ধরনের জরিপ এবং আমাদের কাছে যেসব তথ্য উপাত্ত আছে সেগুলোর ভিত্তিতেই ১৪ দলের আসন বণ্টন বরাদ্দ করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেছেন, তাদের সঙ্গে আসন নিয়ে বৈষম্য করা হয়েছে- এই প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমাদের সাথে তো তাদের আজকেও বৈঠক আছে। আজকেও আমরা বিকেলে বসবো। সেখানে আলাপ আলোচনা হবে এবং আমরা একটা জায়গায় সুন্দর করে পৌঁছাতে পারবো। এটা নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। অনেকে অনেক কথা বলবেই তবে সবকিছুর পরও আমরা ইতিবাচক ভাবে আমরা একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। উৎসমুখর পরিবেশ হবে।
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বিজয় দিবস, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আয়োজন করে বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ।
সেখানে জাতির মধ্যে আজকে ঐক্য নেই জানিয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ১৪ দলীয় জোট সেই ঐক্যকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করছি। এক্যবদ্ধভাবে আমরা নির্বাচন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমাদের বলতে হয়, যে নির্বাচনী আসন বণ্টন গতকাল আমাদের প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে, আমরা মনে করি এতে আমাদের আমাদের শরিক দলগুলোর প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ১৪ দলীয় নেত্রী, দেশনেত্রীর প্রতি আবেদন জানাবো, তিনি যেন এ বণ্টনটি পুনরায় মূল্যায়ন করেন এবং ১৪ দলীয় জোটের সব দলের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করেন। যাতে করে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি আমাদের বৃহত্তম দল নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রয়োজন অন্যান্য সব অসাম্প্রদায়িক শক্তির একটি সুদৃঢ় ঐক্য। কেবলমাত্র সে ঐক্যের মধ্যে দিয়েই আমরা দেশবিরোধী এবং যারা দেশের মূলনীতিগুলোকে বিপর্যস্ত করতে চায়, তাদের পরাজিত করতে পারি। সেজন্য আমাদের ১৯৭১ এর মতো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় সামিল হতে হবে।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র আজ নতুন পরীক্ষার সামনে পড়েছে। এ পরীক্ষায় গণতন্ত্রকে উত্তীর্ণ করতে হবে। গণতন্ত্র আমদানি-রপ্তানি করা যায় না। এটি প্রতিটি দেশের ঐতিহ্য এবং ইতিহাস অনুযায়ী গড়ে উঠে। আমাদের দেশেও সেভাবে এটাকে গড়ে তুলতে হবে। আমরাও একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা চাই দেশের মানুষ যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। দেশের মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারে। আর এর মধ্য দিয়েই কেবলমাত্র গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে পারে।
সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দেশের ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিকরা কাজ করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এখনো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে রক্ষা করার জন্য অশুভ শক্তি, দেশ বিরোধী রাজনীতি, সাম্প্রাদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
সবাইকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের যে কোনো মূল্যে এ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এখন এ যুদ্ধে আমাদের এমনভাবে আঘাত হানতে হবে, যাতে এ অশুভ শক্তি দেশে বিরাজনীতিকরণের মধ্য দিয়ে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের বিজয়ের স্বাদ যেন ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে। অশুভ শক্তিকে নিমূর্ল করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়ে আমরা জানান দিতে চাই, আমরা নিজেদের সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আজকে নির্বাচনকে ছুতো করে বিএনপি-জামায়াত চক্র কার্যত এটি সরকার উৎখাতে চক্রান্তে লিপ্ত আছে, সাংবিধানিক ধারা বানচালের চক্রান্তে লিপ্ত আছে, দেশে একটি বিদেশি রাজাকারপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠার চক্রান্তে লিপ্ত আছে। সে চক্রান্ত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য যথাসময়ে নির্বাচন করা দরকার এবং সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা দরকার।
তিনি আরও বলেন, আজকে বিএনপির যে চক্রান্ত সে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আবার পিছিয়ে যাবে নাকি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা বলিষ্ঠভাবে একটাই কথা বলেছেন। সময়মতো নির্বাচন করতে হবে এবং সংবিধান সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা ১৪ দলের শরিকরা সে ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাড. এস কে সিকদারের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ড. নাসির উদ্দিন খানের স্বাগত বক্তব্যে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার বড়ুয়া ও গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ড. শাহাদাত হোসেন খান।