অ্যাথলেটিক্সে শিরিনের দিন

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টান টান উত্তেজনা। ৪*৪০০ মিটার রিলে। এই ইভেন্টের ওপর দলীয় শিরোপা নির্ভর করছে। নৌবাহিনীর শিরিন আক্তার ৪০০ মিটার রিলের শেষ ৪০০ মিটারে ছিলেন। তিনি যখন সতীর্থের হাত থেকে ব্যাটন নেন, তখন সেনাবাহিনীর অ্যাথলেট তার চেয়ে অন্তত ৫০ মিটার এগিয়ে ছিল। ৩০০ মিটার পর শিরিন সেই দূরত্বকে পেছনে ফেলে দেন। নাটকীয়ভাবে রিলেতে দলকে আরেকটি স্বর্ণ এনে দেন তিনি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শুরু হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উল্লাস।

বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার ৪৭তম জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে ৪টি স্বর্ণ জিতেছেন। দু’টি ব্যক্তিগত আর দু’টি দলীয় স্বর্ণ। গতকাল দ্রুততম মানবী হওয়ার পর আজ (শনিবার) দিনের তিন অংশে তিনটি স্বর্ণ জিতেছেন। সকালে জিতেছেন ৪*১০০ মিটার রিলে। দুপুরে ২০০ মিটার ইভেন্টে নিজের রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণ জিতেছেন। ২৪.৬৮ টাইমিংয়ে ২০০ মিটারে রেকর্ড গড়েছেন আজ। তার আগের রেকর্ডটি ছিল ২০১৯ সালে ২৪.৯৭।

রেকর্ড গড়ার পর সাংবাদিকদের সামনে আসেননি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট থাকায়। ৪*৪০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জয়ের পরই আসলেন। এবারের জাতীয় প্রতিযোগিতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহুর্ত ছিল ৪*৪০০ মিটার রিলে। সেই রিলেতে অসাধারণ কামব্যাক করে নৌবাহিনীকে আরেকটি স্বর্ণ এনে দেওয়া শিরিন বলেন, ‘৩০০ মিটার পর্যন্ত আমি আমার মতো দৌড়েছিলাম, বাকিটা দর্শকের জন্য দৌড়েছি। আমি জানি না, আল্লাহ আমাকে কিভাবে নিয়ে এলেন, আমার মনে হয় টাইমিং ধরলে চারশ মিটারে এটা সেরা টাইমিং। আমার কাছাকাছি কেউ থাকলে আমি ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করতে পারব–এমনটা আশা করেছিলাম, আল্লাহ যদি চায়, আল্লাহর অশেষ রহমত।’

আরো পড়ুন  পাকিস্তানের যেসব ক্রিকেটারদের প্রশংসায় মুশফিক

চারটি স্বর্ণ জয়ের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন এভাবে, ‘অনুভূতি কখনোই বোঝানোর মতো নয়। সব মানুষেরই নিজস্ব যে অনুভূতি থাকে, অনেক অসাধারণ কিছু থাকে, অনেক গল্প থাকে পেছনে, কষ্ট থাকে, অনেক বাঁধা থাকে। আমার পেছনে যত বাঁধাই থাকুক, আমার কোচ আব্দুল্লাহ হেল কাফি, বিকেএসপি, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, আমার যা এবং যখন কিছু প্রয়োজন হয়েছে, সবসময় চেষ্টা করেছে আমাকে সেটা দেওয়ার।’

শিরিনের কারিগর বিকেএসপির সাবেক কোচ আব্দুল্লাহ হেল কাফী। তার হাত ধরে অনেক অ্যাথলেট তৈরি হয়েছেন। নিজেও ছিলেন দ্রুততম মানব। শিরিনের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতার কারণ ও বিশেষত্ব সম্পর্কে কাফী বলেন, ‘শিরিন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও নিয়মিত অনুশীলন করে। এটাই তার সাফল্যের মূল কারণ। কোথাও বেড়াতে গেলেও সে ট্র্যাকসুট নিয়ে যায়। বিউটি ও অন্য দ্রুততম মানবীদের মতো মেধাবী না হলেও সে পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’

শিরিনের বয়স ত্রিশ বছরের কাছাকাছি। এই বয়সেও ট্র্যাকে অপ্রতিরোধ্য। এই প্রসঙ্গে শিরিনের মন্তব্য, ‘আসলে এই বয়স বলতে কিছু নেই। ২০১৩ থেকে আমি সিনিয়র পর্যায়ে খেলি। ক্লাস সেভেন থেকে আমি দ্রুততম বালিকা ও পরে কিশোরী হয়েছি। দ্রুততম মানবী হয়েছি, যেটা এবার ১৫তম বারে এসে দাঁড়াল। ২০০ মিটারের রেকর্ডটিও আমার ছিল (২৪.৯৭), সেটি আবার নতুন করে মজবুত করতে পেরেছি, নতুন রেকর্ড গড়তে পেরেছি, এটা আসলে অসাধরণ। কোচ আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। আগেও বলেছি আর কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা পেছন থেকে আমাকে অনেক সাপোর্ট করে। যে জন্য আমি নিজের কাজটা করতে পারছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *